কক্সবাজারে আমন উৎপাদনে কৃষকের বাজিমাত

এম. বেদারুল আলম :
আমন ধানের মৌ মৌ গন্ধে ভরপুর জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল। যেন নবান্নের উৎসব চলছে কৃষকের ঘরে ঘরে। নতুন ধানের সাথে নতুন চালের পিঠা উৎসব বেশিরভাগ কৃষক পরিবারে। বোরো ধানের সফল উৎপাদনের পর কৃষকরা বাজিমাত করেছে আমন উৎপাদনে।

কোন ধরনের রোগ বালাই না থাকায় আমনের এ বাম্পার ফলন বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ আবুল কাশেম। তিনি বলেন- এ বছর কোন ধরনের রোগ বালাই ছিলনা, কৃষকরা সঠিক সময়ে সার, বীজ এবং সেচ দিতে পেরেছে। ফলে আমনের বাম্পার উৎপাদন হয়েছে। ইতোমধ্যে ৯০ শতাংশ ধান কাটা শেষ হয়েছে। আগামি মাসের মধ্যে কৃষকরা সব ধান কাটা শেষ করতে পারবেন বলে তিনি আশা করেন। উৎপাদনে ৭৮ হাজার হেক্টর জমিতে ২ লাখ মে.টন চাল উৎপাদনের লক্ষামাত্রা নির্ধারন করা হয়েছিল তা ইতোমধ্যে ছাড়িয়ে গেছে বলে তিনি জানান।

মওসুমের শুরুতে জেলার প্রায় ২ লাখ কৃষক আমন চাষে মাঠে নামে। এ বছর অনুকুল আবহাওয়া, পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ, কৃষি অধিদপ্তরের মাঠকর্মীদের সঠিক নির্দেশনা, ধানে রোগ বালাই কম হওয়ার কারনে আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে বলে দাবি সংশ্লিষ্ঠ কর্মকর্তাদের। ইতোমধ্যে জেলায় ৯০ শতাংশ জমিতে আমন ধান কাটা শেষ হয়েছে অবশিষ্ট ধান আগামি ডিসেম্বরের মধ্যে কাটা শেষ হবে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক। জেলার সবচেয়ে বেশি ফলন হয়েছে উখিয়া, টেকনাফ এবং চকরিয়ায়। ধান কাটা ও বেশি হয়েছে উক্ত ৩ উপজেলায়।

গত মাসে তিনি কক্সবাজার সদর, চকরিয়া, রামু ও টেকনাফে ধান কাটা কার্যক্রম নিজে উপস্থিত থেকে উদ্ধোধন করেছেন বলে দৈনিক কক্সবাজারকে জানিয়েছেন। আগামি সপ্তাহের মধ্যে ধান কর্তন প্রায় শেষ হবে বলে তিনি জানান। নিচু এলাকার জমির ধান কাটতে সময় লাগছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানা যায়, জেলার ৮ উপজেলায় এবার ৭৮ হাজার ৯’শ ৫০ হেক্টর জমিতে আমন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার ৪৩ মেট্রিক টন চাল। ইতোমধ্যে ৩২ শতাংশ আমন ধান কাটা শেষ হয়েছে। অবশিষ্ট আমন কাটা ১ মাসের মধ্যে শেষ  হবে বলে জানা গেছে। এ বছর আমন মওসুমে তিন জাতের ধানের আবাদ করা হয়। আবাদকৃত তিন জাতের ধান হল উফশী, স্থানীয় এবং হাইব্রীড।

এদের মধ্যে হাইব্রীড জাতের ২৪৫৫ হেক্টর জমিতে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা র্নিধারণ করা হয় ৮১০৯ মেট্রিকটন। উপসী জাতের ৭৩,২০০ হেক্টরে ২,১৪,৬৮৬ মেট্রিকটন। এছাড়া স্থানিয় জাতের ৩২৯৫ হেক্টরে ৭২৪৮ মেট্রিকটন। এ বছর মওসুমের শুরুতে  বন্যা না হওয়ায় চাষাবাদে কৃষকদের কৃষকরা দারুনভাবে চাষাবাদ করতে সুযোগ পায়। ফলে আমনের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, নিবিড় বার্ষিক সফল উৎপাদন কর্মসূচীর আওতায় ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে আমন ধানের উপজেলা ভিত্তিক জমি আবাদ ও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।

জেলায় চলতি আমন মওসুমে ৭৮  হাজার ৯শ ৫০ হেক্টর জমিতে আবাদের বিপরীতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ২ লাখ ৩০ হাজার ৪৩ মেট্রিক টন চাল। উপজেলা ভিত্তিক আবাদ ও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা যথাক্রমে চকরিয়ায় ১৯ হাজার ৪শ ৪০ হেক্টরে ৬১ হাজার ২০৬ মেঃ টন। পেকুয়ায় ৮ হাজার ৪শ  হেক্টরে ২৩ হাজার ৩ মেঃ টন। রামুতে ৯ হাজার ৪শ ৫০ হেক্টরে ২৬ হাজার ৪শ ৫০ মেঃ টন। সদরে ৯ হাজার ৫০ হেক্টরে ২৬ হাজার ১শ ১৮ মেঃ টন। উখিয়ায় ৯ হাজার  ৬১০ হেক্টরে ২৪৭ হাজার ১ মেঃ টন। টেকনাফে ১০ হাজার  ৭শ ৬০ হেক্টরে ২৯ হাজার ২শ  ৩০ মেঃ টন। মহেশখালীতে ৮ হাজার ২শ ৪০ হেক্টরে ২৫ হাজার ৮শ ৫৬ মেঃ টন এবং কুতুবদিয়ায় ৪ হাজার হেক্টরে ১০ হাজার ৭শ ৭৯ মেঃ টন।

আমনের বাম্পার উৎপাদন বিষয়েরামুর চাকমারকুল ইউনিয়নে দায়িত্বপালনকারি উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা মোঃ জাকারিয়া, কচ্ছপিয়ার উপ সহকারি মোঃ জহির উদ্দিন এবং পিএমখালীর উপ সহকারি কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা জানান, আমাদের সুষ্ঠু তদারকি, কৃষকদের নিবিড় পরিচর্যা এবং সকলের সম্মীলিত প্রচেষ্টা এবার আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষকরা চাইলে বেশির ভাগ ধান কেটে ঘরে তুলতে পারবে।

এদিকে সদর ও রামু উপজেলার কয়েকজন প্রান্তিক ও বর্গাচাষি সিরাজ উল্লাহ, আবদুল হাকিম, সালামত উল্লাহ , কবির হোসেন, মুজিব উল্লাহ, মোহাম্মদুল হক জানান- আমরা অনেক পরিশ্রম করে ধান উৎপাদন করলেও সরকার ধান ক্রয় করার সময় অফিসে কর্মকর্তারা টাকা ছাড়া ধান (উৎকোচ) ক্রয় করেন না। খাদ্য কর্মকর্তার কাছে ধান দিতে গেলে তারা বিভিন্ন অযুহাত দেখিয়ে ফিরিয়ে দেয় অথচ সরকার ন্যায্যমূল্যে কৃষক পর্যায়ে ধান ক্রয় করতে নির্দেশ দিয়েছেন । ধানের নায্যমূল্য নিশ্চিত করার জন্য কৃষি কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন কৃষকরা। এছাড়া ঝিলংজা বীজের খামারে সরকারিভাবে আনা বীজ মৌসুমের শুরুর দিকে কালোবাজারে চলে যাওয়ায় চড়া দামে বীজ ক্রয় করার জন্য কৃষকরা চরম ক্ষতির শিকার হয়েছিল। যার কারনে কৃষকরা মওসুমের শুরুতে বীজের বাজার তদারকির জন্য ডিলারদের কাছে যাওয়ার অনুরোধ জানান।  কয়েকজন কৃষক অভিযোগ করে বলেন- ধান এখন পেকে যাওয়ায় আমরা কাটতে গিয়ে বিপাকে পড়েছি। কেননা পাকা ধানের ছড়ার বিভিন্ন ডগায় পোকা আক্রমন করার কারনে ধান গাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মাটিতে পড়ে যাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত ধান পাওয়ার সময় এ আক্রমন কৃষকদের ভাবিয়ে তুলেছে। শেষ মুহুর্তে এসে কৃষকরা কৃষি কর্মকর্তাদের মাঠ পর্যায়ে তদারকি প্রত্যাশা করেন।

আমনের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার কারনে উদ্বৃত্ত খাদ্য জেলার খাদ্য সংকট কাটিয়ে দেশের নীট উৎপাদনে অবদান রাখবে বলে জানান জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ আবুল কাশেম।